Md. Abdul Aziz

যৌতুক প্রথা বন্ধে হজরত মুহাম্মদ (সা.) -এর অবদান

মানব ইতিহাসের সূচনা থেকেই দাম্পত্য জীবনের শুরু মানবজাতির সূচনা ঘটে হজরত আদম (.) হজরত হাওয়া (.) দম্পতির পৃথিবীতে আগমনের মধ্য দিয়ে মানবজাতির অস্তিত্ব সুরক্ষা, বংশ বিস্তার এবং পারিবারিক সামাজিক শৃঙ্খলা বজায় রাখতে দাম্পত্য জীবনের ভূমিকা অনস্বীকার্য কিন্তু কালক্রমে অন্যান্য বিষয়ের মতোই এই সুপবিত্র বিয়েশাদিতেও নানা ধরনের রুসুম-রেওয়াজ, রীতি-প্রথা, অপসংস্কৃতি ঢুকে পড়েছে এর মধ্যে যৌতুক অন্যতম মেয়ের মা-বাবা, আত্মীয়স্বজনের কাছ থেকে বিয়ের বিনিময়ে শর্তারোপ করে টাকা-পয়সা, ধন-সম্পদ, গাড়ি-বাড়ি, রেডিও, টিভি, ফ্রিজ, ফার্নিচার ইত্যাদি যেকোনো কিছু আদায় করাই যৌতুক ২০০০ সালের নারী শিশু নির্যাতন দমন আইনে যৌতুকের সংজ্ঞায় বলা হয়েছে- বিয়ে উপলক্ষে বরপক্ষ কনেপক্ষের কাছ থেকে বিয়ের আগে, বিয়ের সময় কিংবা বিয়ের পর প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ শর্তারোপ বা দাবি করে যেসব সামগ্রী বা অন্যবিধ সম্পদ বা অন্য কিছু আদায় করে তাকেই যৌতুক বলে

যৌতুকের কারণে বহু নারীর জীবন বিপন্ন হয়েছে এবং আজও হচ্ছে অনেক পরিবার ভেঙেছে বহু সন্তান মা-বাবার স্নেহ থেকে বঞ্চিত হয়েছে হতাহতের ঘটনাও ঘটেছে সম্প্রতি এর সঙ্গে যোগ হয়েছে এসিড-সন্ত্রাস যৌতুকলোভী স্বামী স্ত্রীকে এসিড নিক্ষেপ করার মতো ঘৃণ্য জঘন্য অপরাধেও লিপ্ত হচ্ছে ইসলাম যৌতুককে জুলুম প্রতিপন্ন করেছে কোরআন, হাদিস, ইজমা, কিয়াস- শরিয়তের এই দলিল চতুষ্টয়ের মধ্যে যৌতুকের বৈধতার কোনো প্রমাণ মেলে না হজরত রাসুল (সা.) তাঁর জীবদ্দশায় আপন চার মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন, সাহাবায়ে কেরামের অনেক বিয়ে তাঁর উপস্থিতিতে জ্ঞাতসারে সম্পাদিত হয়েছে এসব বিয়ের কোথাও যৌতুকের লেনদেনের প্রমাণ নেই খোলাফায়ে রাশেদাহ, সাহাবায়ে কেরামের সোনালি যুগেও যৌতুক প্রথার অস্তিত্ব ছিল না চার মাজহাবের ইমামরাও যৌতুককে বৈধ বলেন না

হজরত মুহাম্মদ (সা.) বিয়েশাদির ক্ষেত্রে মানুষের মন-মানসিকতা, চিন্তাচেতনা, ধ্যান-ধারণাকে এমন একটি পথে ধাবিত করেছেন, যাতে যৌতুক প্রথা মানবসমাজে অনুপ্রবেশ করতেই না পারে বিয়ের মুখ্য উদ্দেশ্য, বিয়ের ক্ষেত্রে পাত্রী নির্বাচনে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিবেচ্য বিষয়াবলি তিনি যা নির্ধারণ করেছেন, তা যৌতুক প্রথা বন্ধে বিরাট ভূমিকা রাখতে সক্ষম সক্ষম বলেই যত দিন সেসব বিষয় মুসলমানরা অনুসরণ করেছে, তত দিন যৌতুক প্রথা তাদের সমাজে বিষবাষ্প ছড়ায়নি যৌতুক প্রথার ভয়াল ছোবলে আজ যখন আমাদের সামাজিক জীবন বিপন্ন, তখন যদি আবার হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর সেই যৌতুক বন্ধে ভূমিকা রাখতে মূলনীতিগুলো বারবার পর্যালোচনা জনমানুষের কাছে প্রচার করা হয়, তাদের মন-মননে সেগুলো ঢুকিয়ে দেওয়া হয়, মানতে উৎসাহিত-অনুপ্রাণিত করা হয়, তাহলে আজও দেশ-জাতি যৌতুকের অভিশাপ থেকে মুক্তি পাবে দেখা যাক, হজরত মুহাম্মদ (সা.) বিয়ের মানসিকতা, পাত্রী পছন্দে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিবেচ্য বিষয়াবলি এবং গোটা বিয়েশাদির মুখ্য লক্ষ্য উদ্দেশ্য কী নির্ধারণ করেছেন হজরত মুহাম্মদ (সা.) আমাদের শিখিয়েছেন- মূলত টাকা-পয়সা, ধনদৌলত, সোনা-গয়না ইত্যাদি বিয়েশাদির উদ্দেশ্য, লক্ষ্য মুখ্য হতেই পারে না বরং সতী-সাধ্বী, দ্বীনদার নারীর সঙ্গে পরিণয়সূত্রে আবদ্ধ হয়ে অশ্লীলতা ব্যভিচার থেকে নিজেকে রক্ষা করা, বৈধ পথে নিজের মানবিক-জৈবিক কামনা পূরণ, ইমানদার সন্তান লাভ, মানব বংশধারা সংরক্ষণ এবং সর্বোপরি ঘরসংসার সুষ্ঠুভাবে পরিচালনাই বিয়ের লক্ষ্য হজরত মুহাম্মদ (সা.) ইরশাদ করেন- সাধারণত চারটি কারণে কোনো নারীকে বিয়ে করা হয় তার অর্থ-সম্পদ, বংশ মর্যাদা, রূপ-সৌন্দর্য দ্বীন-ধর্মের কারণে তবে তোমরা কিন্তু দ্বীনদার নারীকেই বিয়ে করবে (বুখারি, মুসলিম, মিশকাত, পৃষ্ঠা ২৬৭) তিনি আরো ইরশাদ করেন- যে বিয়েশাদিতে অপেক্ষাকৃত কম ব্যয় হয়, তা- সর্বাপেক্ষা বরকতময়

হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর ওপর অবতীর্ণ কোরআনে আমাদের শেখানো হয়েছে- বিয়েতে স্বামী স্ত্রীর কাছ থেকে অর্থ-সম্পদ চাওয়া-পাওয়ার আদৌ কোনো সুযোগ নেই বরং স্বামীর কাছে স্ত্রীর ন্যায্য পাওনা রয়েছে আর তা হচ্ছে দেনমোহর পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, 'এবং তোমরা নারীদের তাদের মোহরানা স্বতঃপ্রবৃত্ত হয়ে প্রদান করবে তবে তারা সানন্দে মোহরের কিছু অংশ তোমাদের জন্য ছেড়ে দিলে তোমরা তা স্বাচ্ছন্দ্যে ভোগ করতে পারো (সুরা নিসা : ) আরো ইরশাদ হয়েছে, জাহেলি যুগে আরব দেশে ওয়ারিশরা পরিত্যক্ত সম্পত্তির মতোই মৃত ব্যক্তির স্ত্রীকে জবরদস্তি অধিকারে নিয়ে নিত তার কিছু সম্পদ থাকলে তা হস্তগত করার জন্য তাকে নিজে বিয়ে করত বা বিয়ে না করেই আটকে রাখত অন্যত্র বিয়ে দিলেও মোহর নিজেই আত্মসাৎ করত এসব নিষিদ্ধ করে পবিত্র কোরআনে আয়াতটি অবতীর্ণ হয় 'হে ইমানদাররা, নারীদের জবরদস্তি উত্তরাধিকার গণ্য করা তোমাদের জন্য বৈধ নয় তোমরা তাদের যা দিয়েছ, তা থেকে কিছু আত্মসাৎ করার উদ্দেশ্যে তাদের অবরুদ্ধ করে রেখো না যদি তারা সুস্পষ্ট ব্যভিচারে লিপ্ত না হয় তাদের সঙ্গে সৎভাবে জীবন যাপন করবে' (সুরা নিসা : ১৯) অন্য আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, 'তোমরা যদি এক স্ত্রীর সঙ্গে অন্য স্ত্রী গ্রহণের সংকল্প করো এবং তাদের কাউকে প্রচুর পরিমাণে অর্থ দিয়েও থাকো, তবু তা থেকে কিছুই ফেরত নিয়ো না তোমরা তা কি অন্যায়ভাবে প্রকাশ্য গোনাহের মাধ্যমে গ্রহণ করবে? (সুরা নিসা : ২০) হজরত মুহাম্মদ (সা.) নিজে বিয়ে করেছেন স্বীয় সহধর্মিণীদের তিনি মোহরানা দিয়েছেন নিজের মেয়েদের বিয়ে দিয়েছেন মোহরানা নির্ধারণ করেই ছাড়া মোহরানার মৌলিক বিধান বিচ্ছিন্ন বা সংশ্লিষ্ট ঘটনাবলি সম্পর্কিত হাদিসের বিশাল ভাণ্ডার রয়েছে পবিত্র কোরআন হাদিস পর্যালোচনা করলে সুস্পষ্ট প্রমাণিত হয়, বিয়েতে স্বামী স্ত্রীকে মোহরানা দিতে বাধ্য ছাড়া স্বতঃস্ফূর্ত হয়ে স্বামী স্ত্রীকে অলংকার-গয়না, শাড়ি-চুড়ি ইত্যাদি দিতেই পারে দেওয়াটা বৈধ, কিন্তু স্বামী স্ত্রী বা স্ত্রীর পক্ষের কাছে কিছু পাওয়ার আশা করতে পারে না শর্তারোপ করে নেওয়া তো সম্পূর্ণ হারাম

মনে করা হয়, হজরত ফাতেমা (রা.)-এর বিয়েতে হজরত মুহাম্মদ (সা.) একটি চৌকি, খেজুর পাতা ভর্তি চামড়ার একটি গদি, একটি পানির পাত্র এবং আটা পেষার চাক্কির দুটি পার্ট উপহার দিয়েছিলেন ঘটনা থেকে কেউ কেউ যৌতুকের বৈধতার প্রমাণ খোঁজার ব্যর্থ প্রয়াস পান আবার অনেকে মনে করেন, শর্তারোপ করে যৌতুক নেওয়া নিষিদ্ধ হলেও স্ত্রীর পক্ষ স্বেচ্ছায়, স্বতঃস্ফূর্ত হয়ে যৌতুক দিলে তা গ্রহণ করাটাও অন্তত এই ঘটনা থেকে প্রমাণিত হয় কিন্তু উভয় ধারণাই নিছক ভ্রান্ত হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) হজরত ফাতেমা (রা.)-এর বিয়েতে যেসব জিনিস দিয়েছিলেন, তা হজরত আলীর (রা.) অর্থ-সম্পদ দিয়েই কিনেছিলেন হাদিসে রয়েছে, বিয়ের আগে হজরত নবী করিম (সা.) হজরত আলী (রা.)-কে জিজ্ঞেস করেছিলেন- তোমার কাছে কিছু আছে? জবাবে আলী (রা.) বলেছিলেন, আমার কাছে একটি ঘোড়া এবং একটি লৌহবর্ম আছে কথা শুনে হজরত রাসুল (সা.) বললেন, ঘোড়া খুব প্রয়োজনীয় বাহন সুতরাং এটা রেখে দাও, আর লৌহবর্মটি বিক্রি করে তার মূল্য আমার কাছে নিয়ে এসো হজরত আলী (রা.) হজরত উসমান (রা.)-এর কাছে ৪৮০ দিরহামে বর্মটি বিক্রি করে তা হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে নিয়ে এলেন তিনি তখনই হজরত বিলাল (রা.) হজরত উম্মে সুলায়ম (রা.)-কে ডেকে পাঠালেন তাঁরা এলে তিনি হজরত উম্মে সুলায়ম (রা.)-কে কিছু দিরহাম দিলেন সাজানি আতর-গোলাপ কেনার জন্য অবশিষ্ট দিরহাম হজরত বিলাল (রা.)-কে দিলেন গৃহের প্রয়োজনীয় আসবাব কেনার জন্য হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর নির্দেশ অনুযায়ী হজরত উম্মে সুলায়ম (রা.) হজরত বিলাল (রা.) সাজানি, আতর-গোলাপ গৃহের প্রয়োজনীয় আসবাব কিনে নিয়ে এলেন হাদিস থেকে প্রতীয়মান হয় যে হজরত আলী (রা.)-এর অর্থ দিয়েই হজরত রাসুল (সা.) আসবাব কেনার ব্যবস্থা করেছিলেন সুতরাং তা কোনো অবস্থায়ই যৌতুক হয় না

যৌতুক না দিলে বর বা বরপক্ষ এই বিয়েতে সম্মত নয়- অবস্থা এমন না হলে চাওয়া এবং শর্তারোপ ছাড়া স্বতঃস্ফূর্তভাবে কনেপক্ষ বরপক্ষকে কিছু দিলে তা উপহার বা উপঢৌকন বলে বিবেচিত হবে এবং তা জায়েজ কিন্তু বর্তমানে আমাদের সমাজে বরপক্ষ না চাওয়া সত্ত্বেও কনের সঙ্গে যৌতুক না দিলে লজ্জা হবে বরপক্ষের কাছে ছোট হতে হবে ভেবে অনেক কনেপক্ষ একান্ত বাধ্য হয়ে ঋণ করে বা স্বজনদের সাহায্য নিয়ে হলেও যৌতুক দিয়ে থাকে সুতরাং সে ক্ষেত্রে বরপক্ষের শর্তারোপ চাওয়া ছাড়াও এই যৌতুক হারাম বলে অনেক বিজ্ঞ মুফতি মত ব্যক্ত করেছেন সুতরাং সমাজের এই কুপ্রথা বন্ধ করার উদ্দেশ্যে কন্যাদায়গ্রস্ত পিতা-মাতার ভারমুক্তির মহান লক্ষ্যে মতটির অনুসরণ সমুদয় কল্যাণই বয়ে আনবে তবে যেসব মেয়ের বাবার প্রচুর সামর্থ্য রয়েছে, মেয়ের বিয়েতে কিছু ব্যয় করতে যাদের আর্থিক সংকটে পড়তে হয় না, বরং সামর্থ্য আছে বলে বরকে কিছু দিতে যারা চাপ নয়, আনন্দ মনে করে তারা স্বেচ্ছাপ্রণোদিত হয়ে স্বতঃস্ফূর্তভাবে বরকে যা দেবে তাতে দোষ হবে না বরের তা গ্রহণ করতে আপত্তি নেই মূল কথায় আবার ফিরে আসি হজরত মুহাম্মদ (সা.) প্রবর্তিত বিয়ের সুন্নাত পদ্ধতি, তাঁর নির্ধারিত বিয়ের মূল লক্ষ্য উদ্দেশ্য এবং পাত্রী নির্বাচনে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিবেচ্য বিষয়াবলি আমাদের সমাজে অনুসৃত হলে যৌতুকের অভিশাপ থেকে আমরা মুক্তি পাব মুক্তি পাবে অবলা নারী জাতি, মুক্তি পাবেন লাখো-কোটি কন্যাদায়গ্রস্ত পিতা

 

স্বদেশপ্রেম ইমানের অঙ্গ

স্বদেশপ্রেম একটি মহৎ গুণ যার মধ্যে স্বদেশপ্রেম নেই, তার ইমান নেই দেশ দেশের মাটি মানুষকে ভালোবাসা মুমিনের দায়িত্ব স্বদেশপ্রেম অর্থ হচ্ছে নিজ দেশের প্রতি, জাতির প্রতি, ভাষার প্রতি সুতীব্র আকর্ষণ অনুভব করা দেশের প্রতি গভীর অনুরাগ, নিবিড় ভালোবাসা যথার্থ আনুগত্যকে দেশপ্রেম বলা হয় সত্যিকার অর্থে মাতৃভূমির উন্নতিকল্পে সর্বস্ব ত্যাগের সাধনাই স্বদেশপ্রেম দেশের লাল-সবুজের পতাকা আমাদের স্বপ্ন দেখায়, নতুন দিনের নতুন এক রঙিন ভবিষ্যৎ ইসলাম শিক্ষা দেয়_দেশকে মায়ের মতো ভালোবাসতে সন্তানের মতো বুকে জড়িয়ে রাখতে দেশপ্রেম ইমানের অঙ্গ বলেও গুরুত্ব দেওয়া হয় প্রতিটি ধর্মেই স্বদেশপ্রেমের গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) বলেন, 'স্বদেশপ্রেম ইমানের অঙ্গ' হিন্দু ধর্মে বলে, 'স্বদেশ স্বর্গের চেয়েও পবিত্র'

প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) মক্কায় কাফেরদের হাতে নির্মম অত্যাচার নির্যাতনের শিকার হয়ে মদিনায় হিজরত করার সময় প্রিয় জন্মভূমি মক্কার দিকে তাকিয়ে বারবার বলেছিলেন, 'হে আমার প্রিয় মাতৃভূমি! আমি তোমাকে ভালোবাসি তোমাকে ছেড়ে আমি চলে যেতে চাইনি কিন্তু তোমার বাসিন্দারা আমাকে থাকতে দিল না, তাই চলে যাচ্ছি তবে আবারও ফিরে আসব তোমার বুকে' রাসুল (সা.)-এর এমন মর্মস্পর্শী হৃদয়গ্রাহী কথা থেকেই বোঝা যায়, রাসুল (সা.) তাঁর মাতৃভূমিকে কতটুকু ভালোবাসতেন

ইসলাম সত্যের ধর্ম, ইসলাম বিশ্বাস করে সবার মৌলিক স্বাধীনতার অধিকার দেশ দেশের অধিবাসীদের বহিঃশত্রুর আক্রমণ থেকে রক্ষা করা, সীমান্ত হেফাজত করা এবং শত্রুরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ অভিযান প্রেরণ করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব আর এতে সক্রিয় অংশগ্রহণ করা দেশবাসীর দায়িত্ব আর ইসলাম এমন যুদ্ধে অংশগ্রহণে মুমিনদের উৎসাহিত করে পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন, 'হে ইমানদাররা! আমি কি তোমাদের এমন বাণিজ্যের সন্ধান দেব, যা তোমাদের রক্ষা করবে মর্মন্তুদ শাস্তি থেকে আর তা হলো তোমরা ইমান আনবে আল্লাহর ওপর এবং তাঁর রাসুল (সা.)-এর প্রতি সেই সঙ্গে আল্লাহর উদ্দেশে সংগ্রাম করবে তোমাদের জান-মাল দিয়ে অন্য আয়াতে আল্লাহ পাক বলেন, 'যুদ্ধের অনুমতি দেওয়া হলো তাদের, যারা আক্রান্ত হয়েছে এবং যাদের ওপর জুলুম-অত্যাচার করা হয়েছে

১৯৭১ সালে আমাদের প্রিয় মাতৃভূমিও আক্রান্ত হয়েছিল পাকিস্তানি আগ্রাসনের তাই আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধও ছিল জালিমের বিরুদ্ধে মজলুমের যুদ্ধ লাখো লাখো মানুষ তাদের নৃশংস হত্যাকাণ্ড নির্যাতনের শিকার হয় দীর্ঘ মাস সংগ্রাম করে আমরা পেয়েছি স্বাধীনতা, একটি ভূখণ্ড লাল-সবুজের পতাকা বিনিময়ে প্রাণ দিয়েছেন অগণিত মুক্তিযোদ্ধা আমরা সব সময় স্মরণ করি সেসব শহীদকে শ্রদ্ধা জানাই তোমাদের হে মহান শহীদান তোমাদের রক্তের বিনিময়ে মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদের দিয়েছেন বাংলার সবুজ-শ্যামল মাতৃভূমি তোমাদের কথা স্মরণ করে প্রতিবছর দেশের মাটি-মানুষ-তরুলতা দেশের জন্য নিজেদের জীবন উৎসর্গ করেছো, তার প্রতিদান কখনো দিতে পারব না তাই মহান আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি, তিনি যেন তোমাদের তার প্রতিদান দেন আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়েছিল মহান আল্লাহর ওপর ভরসা করে ' দেশের মানুষকে মুুক্ত করে ছাড়ব ইনশাল্লাহ'_ প্রত্যয়ে মুক্তিবাহিনী যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল যারা দেশের মানুষের ওপর অত্যাচারী ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিল, তাদের জন্য পরাজয় নিশ্চিত হয়েছিল আল্লাহ কখনো কোনো অন্যায়কে বরদাশত করেন না সম্পর্কে আল্লাহ পাক বলেন, 'জালেমরা যা করে, সে সম্পর্কে আল্লাহকে কখনো বেখবর মনে করো না, তাদের তো ওই দিন পর্যন্ত অবকাশ দিয়ে রেখেছেন, যেদিন চক্ষুগুলো বিস্ফোরিত হবে (সুরা ইবরাহিম, আয়াত : ৪২) মহান মুক্তিযুদ্ধে শাহাদত বরণকারী শহীদের পরিবার, যারা স্বাধীনতার সময় হারিয়েছেন মা-বাবা, ভাই-বোন, স্বামী-স্ত্রী, আত্মীয়স্বজন আমরা কি একবারও তাদের হৃদয়ের দহন জ্বালার কথা বোঝার চেষ্টা করেছি কান পেতে শুনেছি কি স্বজন হারানোর বুকফাটা আর্ত চিৎকার? আমরা মুসলমান হিসেবে একবারও কি চিন্তা করেছি আমাদের শহীদদের কিভাবে স্মরণ করা উচিত কী করলে শান্তি পাবে তাদের আত্মা মহান মুক্তিযুদ্ধের শহীদের জন্য সব সময় দোয়া করতে হবে দেশের কল্যাণে কর্ম সাধনায় লিপ্ত থেকে স্বাধীনতা অর্জন বা বিজয় আমাদের জন্য নিঃসন্দেহে মহা আনন্দের আমাদের মনে রাখতে হবে, প্রতিটি বিজয় আসে মহান আল্লার পক্ষ থেকে সুতরাং দেশপ্রেম মানবধর্ম সবার হৃদয়ে আসুক স্বদেশপ্রেম আল্লাহ আমাদের সবাইকে দেশ জাতির সেবা করার তওফিক দান করুন

 

 

Make a free website with Yola